মানসিকতার পরিবর্তন আনতে পারলেই সুখী ও সফল হওয়া সম্ভব।

“আমি অসুখী, আমার প্রায়শই মন খারাপ থাকে, আমি ব্যার্থ, আমি হতাশ”- এসব ভেবে ভেবে দিন রাত পার করে দিচ্ছি । আচ্ছা , কখনো কি ভেবে দেখেছি এসব নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আবেগ কে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের এই ছোট্ট সুন্দর জীবনের কত মূল্যবান সময় নির্দ্বিধায় নষ্ট করেই চলেছি?

জীবন সত্যিই সহজ সরল কিন্তু আমরাই একে জটিল করে দেখি। আমরা যা চিন্তা করি তা নির্ধারন করে আমাদের জীবনে কি ঘটবে। এজন্যে জীবনে পরিবর্তন আনতে চাইলে সর্বপ্রথম নিজের চিন্তাভাবনা, ও মন মানসিকতা কে প্রসারিত করতে হবে।

  • সুখী হওয়ার সর্বপ্রথম শর্ত হল দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো । মূদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো প্রত্যেকটি বিষয় এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই যদি দৃষ্টিভঙ্গি  কে ইতিবাচক দিকে নিয়ে বিচার করি তাহলেই বুঝতে পারবো কিভাবে মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের কি রয়েছে তার উপর সুখ নির্ভর করেনা বরং, এটি নির্ভর করে , যা রয়েছে , সেগুলো নিয়ে আমি কি রকম অনুভব করি । ‘নিজের যা আছে তা নিয়েই আমি সুখী’ এমন টা অনুভব করতে না পারলে পৃথিবীর সকল সম্পদের মাঝেও সুখ খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
  • আজকের দিনটি এবং বর্তমান মুহুর্তই আপনার একমাত্র জীবনের সময় যা আপনি নিশ্চিত হতে পারেন। ভবিষ্যৎ কি নিয়ে আসতে পারে তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় । তাই এই দিনটির সর্বোত্তম ব্যবহার করুন ।কোন কিছুতে আগ্রহী হন, নিজেকে ঝাঁকি দিয়ে জাগিয়ে তুলুন , কোন একটি শখ তৈরি করুন । প্রবল উৎসাহের বাতায়ন যেন আপনাকে ভাসিয়ে, উড়িয়ে নিয়ে যায় । আজকের দিনটিতে বাঁচুন , আনন্দের সাথে বাঁচুন। নিজেকে আবিষ্কার করুন । কোন কাজটি আপনি আসলেই ভালভাবে করতে পারছেন, কোন কাজটিতে আপনি নিজের সর্বচ্চো চেষ্টা চালিয়ে করতে পারছেন এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে পারছেন তা নিয়ে ভাবুন এবং নিজের সর্বোত্তম ব্যাবহার করুন । মনে রাখতে হবে, চেষ্টা ও একাগ্রতা ছাড়া সফল হওয়া সম্ভব নয় । সফলতা সুখি হওয়ার চাবিকাঠি নয় বরং , সুখী হওয়া সফলতার চাবিকাঠি । 
  • আপনার সুখী ও সফল হওয়া একমাত্র নিজের উপরেই নির্ভরশীল। সুখী থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন , কষ্টদায়ক আবেগ গুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন , আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি করুন। দেখবেন আপনার আনন্দ ও আপনি ; সকল দুঃসাধ্য ,কঠিন ও জটিল কাজগুলোর বিরুদ্ধে অপরাজেয় , অজেয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
  • নেতিবাচকতা কে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখুন । কিছু করতে পারছেন না এইটা ভেবে হতাশাগ্রস্থ না হয়ে কেন করতে পারছেন না তা নিয়ে চিন্তা করুন। না পারার কারণ খুঁজে বের করে নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন যে আপনাকে করতেই হবে । আপনিই পারবেন এমন মানসিক শক্তি জাগিয়ে তুলে চেষ্টা চালিয়ে যান । সফলতা আসবেই ।
  • সুখী জীবন-যাপন করতে চাইলে যেকোনো একটি লক্ষ্য বা উদ্ধেশ্যের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করুন, মানুষ বা বস্তুর সঙ্গে নয় । বেদনা ও আনন্দ যেন আপনাকে ব্যবহার না করতে পারে ; বরং আপনি এসব আবেগ কে ব্যবহার করতে শিখলেই জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন । যদি না পারেন, জীবন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে ।

পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই – নিজেকে ভালবাসুন , নিজের জীবন কে ভালবাসুন জীবনের একটি সুশৃঙ্খল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচুন । জীবনে পরিবর্তন আনতে চাইলে মনকে প্রসারিত ও বিস্তৃত করুন ।

সফল হতে চাইলে – 

সফল হতে চাইলে জাগিয়ে তুলুন ইচ্ছাশক্তি কে ।

”ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়” প্রবাদটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু এই ইচ্ছা বা ইচ্ছাশক্তির কাজআসলে কি? আর কিভাবেই বা আমরা এই ”ইচ্ছা” নামক শক্তি কে জাগ্রত করতে পারি?

সঠিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যা কিছু ভালো তার দিকে আমাদের নিজেদেরকে ধাবিত করাই ইচ্ছাশক্তির কাজ। আর ইচ্ছাশক্তি কে নিজেদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে পারলেই এর সঠিক ব্যবহার সম্ভব। কারন ইচ্ছাশক্তি ছাড়া সফলতা অর্জন অসম্ভব।

জীবনে সফলতা অর্জন করতে চাইলে ইচ্ছাশক্তিকে জাগ্রত করতেই হবে। ইচ্ছাশক্তিকে জাগ্রত করা শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত ভাবেই  সম্ভব। সফলতা অর্জনের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাশক্তির জাগরণ বলতে যা বোঝায় –

★ আমরা চাইলেই যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারি এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা ।

★ নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে যেকোনো নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারা এবং নতুন অভ্যাস রপ্ত করার জন্য সদাপ্রস্তুত থাকা।

★ সকল সম্পদের সঠিক ব্যবহার করার মানসিকতা গড়ে তোলা।

মুলত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ইতিবাচক কর্মশক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারাই ইচ্ছাশক্তির জাগরণ।কিছু পরিস্থিতি বা মনোভাব আমাদের ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করতে বাঁধা প্রদান  করে। সেসকল পরিস্থিতি ও তা মোকাবিলা করার উপায়-

দ্বিধা বা সংকোচ : পূর্বের কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা, গৃহীত  সিদ্ধান্তের খারাপ ফলাফল আমাদের নিরুৎসাহিতকরে দেয় যার ফলে আমরা দ্বিধা-দন্দ্বে পড়ে যাই নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। আবার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ এর মধ্যে কোন পদক্ষেপ নির্বাচন করা উচিৎ সেটিও আমাদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করে ফলে আমরা ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগে পিছিয়ে পড়ি।

এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রবল আত্মবিশ্বাসী হয়ে সবধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার সাহস সঞ্চার করে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের মনোভাব আনতে হবে।

অলসতা : অনেকেই আছে যারা জীবনকে উদ্দেশ্যেহীন মনে করে, যারা  ত্যাগ স্বীকার করতে চায়না, যাদের জীবনের কোনো লক্ষ্য নেই, যারা নিজেদের কাছেই বোঝাস্বরুপ। খেয়ে,ঘুমিয়ে আর বিষন্নতা নিয়েই তারা জীবন পার করে দিতে চায়। এই চরম অলসতা তাদের ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করতে দেয়না।

এই ধরনের মানুষের ক্ষেত্রে একটাই উপায় আত্ম-উপলব্ধি।আত্ম-উপলব্ধি থেকে ছোট্ট প্রচেষ্টা দিয়ে শুরু করেআস্তে আস্তে ইচ্ছাশক্তি কে জাগিয়ে তুলতে হবে।

অতিরিক্ত সক্রিয়তা : কিছু মানুষ আছে নিজেকে অতিব্যাপক মনে করে,  তারা পরিকল্পিত ভাবে ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার করতে পারেনা, সকল ক্ষেত্রেই নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করে।এরা সাধারনত বদমেজাজি, অতিব্যস্ত, ধৈর্যহীন ও অবাস্তববাদী ধরনের। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা ও অস্থির মস্তিষ্ক থেকে এ ধরনের ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। ইচ্ছাশক্তির সঠিক ব্যবহার তাদের অজানা।

এক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা ও উপদেশ এর মাধ্যমে এদের মধ্যে ইচ্ছাশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক ব্যবহার এর গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে হবে যেন ধীরে ধীরে তারা সকল পরিস্থিতি তে সঠিকভাবে ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ করতে পারে।

অতি বাস্তবিকতা : অতি বাস্তবিক মনোভাব আমাদের ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করতে দেয়না। এই অতি বাস্তববাদী মানুষেরা নিজেদের গন্ডি দৈনন্দিন সাধারণ দায়িত্ব ও কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। উন্নতি বা সফলতার দিকে এদের উৎসাহ নেই। সাধারণ জীবন যাপনেই অভ্যস্ত।

এই মনোভাবের উদ্দেশ্যে একটাই কথা প্রত্যেক পরিবর্তন মানুষের জীবনে নতুন দিগন্তের পথ দেখায়। আত্মউন্নতির ধারায় এবং নতুনত্বের দিকে নিজেকে পরিচালনা করাই জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য পুরন করে।

ইচ্ছাশক্তিই আত্মশক্তি! ইচ্ছাশক্তি কে জাগ্রত করতে পারলে ও সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে সফলতা নিশ্চিত। এজন্যে সফল হওয়ার পথের প্রথম পদক্ষেপ হোক ইচ্ছাশক্তির জাগরণ।